Featured
- Get link
- Other Apps
প্লে-ব্যাক বাঙালির আবিষ্কার!
৩রা অক্টোবর, ১৯৩৫। শ্যামবাজারের চিত্রা সিনেমা হলের সামনে বেশ ভিড় — নিউ থিয়েটার্সের ভাগ্যচক্র ছবি মুক্তি পেয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই দর্শকদের মনে বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে নিউ থিয়েটার্সের ছবি মানেই সেরা ছবি।
দেবকী বসুর সঙ্গে ততদিনে মনান্তর ঘটে গিয়েছে নিউ থিয়েটার্সের কর্ণধার বি.এন. সরকারের। তাই আলোকসম্পাতের সঙ্গে চিত্র পরিচালনার দায়িত্ব নীতিন বসুর কাঁধে। অভিনয়ে আছেন বিশ্বনাথ ভাদুড়ি, কৃষ্ণচন্দ্র দে (মান্না দে-র ছোটোকাকা), অমর মল্লিক, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, পাহাড়ী সান্যাল প্রমুখ।
তার আগে একটি পত্রিকার ১৩৪২ শারদীয়া সংখ্যায় ভাগ্যচক্রের বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল “সকল কলাকৌশল উদ্ভাসিত মুখর চিত্র”। কিন্তু কী সেই কলাকৌশল তা খোলসা করে বলা হয়নি, পাছে লোকে আগেই জেনে বসে!
যথাসময়ে মুক্তি পেল ভাগ্যচক্র। ৭ম সপ্তাহে বিজ্ঞাপন ছাপা হল “যত দিন যাইতেছে ‘ভাগ্যচক্র’ দর্শক সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাইতেছে!!”। ১০ম সপ্তাহের বিজ্ঞাপনে বলা হয়, বিখ্যাত জাপানি কবি নোগুচি ভাগ্যচক্র দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া বলিয়াছেন — “দেশী বা বিলাতী এমন সুন্দর ছবি তিনি খুব কমই দেখিয়াছেন।” কিন্তু কোনো বিজ্ঞাপনে প্লে-ব্যাকের কথা উল্লিখিত হয়নি। আসলে তখনও পর্যন্ত শব্দযন্ত্রীরা চলচ্চিত্রজগতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো ছিলেন; মর্যাদাবান ছিলেন না। তাই তাঁদের নামপ্রচার তেমন করে হত না।
অপর এক পত্রিকায় নীতিন বসু লিখেছেন যে ভাগ্যচক্র এবং ধূপছাঁও (ভাগ্যচক্রেরই হিন্দি) ছবিতে শ্যুটিংয়ের সময় সিনেমার একটি গানে নাটকীয়তা আনতে তিনি বেশ বেকায়দায় পড়ে যান। তাঁর ইচ্ছে ছিল গানটিকে কেটে কেটে বিভিন্ন শটে ধরে রাখার। কিন্তু তখনও পর্যন্ত গান সরাসরি রেকর্ড করা হত। তিনি ভাই মুকুল বসুকে গিয়ে সমস্যার কথা বলেন।
“ও একটু ভেবে পথ বাৎলে দিল।” তা হল প্রথমে শুধু গানটা রেকর্ড করে পরে ছবি তোলার সময় শিল্পীদের দিয়ে গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে নিলেই চলবে। তারপর এডিটর ঠিকমতো দৃশ্যগুলো জুড়ে দেবেন। নীতিন লিখেছেন, “অনেক বাধা সত্ত্বেও দু’ভাই মিলে লেগে গেলাম কাজে। আমাদের পরীক্ষা সফল হল। ভাগ্যচক্রে প্রথম প্লে-ব্যাক চালু করি আমরা দু’ভাই। তখন আমাদের ওই আবিষ্কারে পেটেন্ট করে রাখলে ভালো করতাম। রয়ালটি পেতাম আজ লাখ লাখ টাকা। আমাদের সৃষ্টিকে কেউ আর অস্বীকার করত না। সেই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে এখন।”
ভাই মুকুল তাঁকে বলেছিলেন পেটেন্ট করিয়ে নিতে, কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে বাংলা সিনেমার সবাক যুগের আদিপর্বে লেখা হয়ে গেল একটা ইতিহাস। বাঙালিই প্লে-ব্যাক পদ্ধতির উদ্ভাবক। আবিষ্কারের তারিখটি হল ২৮শে মে, ১৯৩৫। আমেরিকা এখান থেকেই শিখে সিনেমায় প্রয়োগ করল সেই বছরেরই ২০শে সেপ্টেম্বর।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
ভাগ্যচক্রে সমবেত নৃত্যের দৃশ্যও ছিল। যারা নাচতেন তাঁরা নাচতে নাচতে গানও গাইতেন। নাচতে নাচতে গাওয়ার সময় অনেকেই দমছুট হয়ে পড়তেন। সেই অসুবিধাও দূর করেছিল প্লে-ব্যাক। গানটি ছিল—
মোরা পুলক যাচি', তবু সুখ না মানি,—
যদি ব্যথায় দোলে, তব হৃদয় খানি।।
তব চোখেরি ভাষা, যদি না আনে আশা
তবে কেমনে গাহি সুধা-সরস-বাণী।।
আমার ভবনে আজই মোহন এসো।
অধর-ধরা বেণু-বাদন এসো।
শিরে শোভে শিখী-পাখা,
নয়নে অমিয়া-মাখা,—
নূপুর রণিয়া প্রেম-সাধন এসো।।
ক্ষণিক মধুর তব হাসির লাগি'—মোদের আনন্দ-লোক নিতি ওঠে জাগি'।
রহে হিয়ায় প্রীতি,
রাজে কণ্ঠে গীতি,
প্রাণে জয় কামনা, তুমি পূরাবে জানি।।
এটিই প্লে-ব্যাকের জন্য তৈরি করা প্রথম রেকর্ড। গানটি গেয়েছিলেন পারুল বিশ্বাস (ঘোষ) এবং সুপ্রভা ঘোষ (সরকার)। এই পারুল ঘোষ এবং সুপ্রভা সরকারই প্রথম বাংলা প্লে-ব্যাক গায়িকা!
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
ছবিঃ ভাগ্যচক্র।
কাহিনীঃ পণ্ডিত সুদর্শন।
পরিচালনা ও ক্যামেরাঃ নীতিন বসু।
সঙ্গীত পরিচালনাঃ রাইচাঁদ বড়াল।
শব্দযন্ত্রীঃ মুকুল বসু।
অভিনয়ঃ দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, পাহাড়ী সান্যাল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, অমর মল্লিক, ইন্দু মুখোপাধ্যায়, অহী সান্যাল, উমাশশী, দেববালা, নিভাননী দেবী, শ্যাম লাহা, বোকেন চ্যাটার্জি, বিশ্বনাথ ভাদুড়ি।
♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️
তথ্যঋণঃ ছায়াছবিতে প্রথম বাঙালি – বারিদবরণ ঘোষ;
চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নিউ থিয়েটার্স – পিনাকী চক্রবর্তী।
- Get link
- Other Apps
Popular Posts
সোফি জার্মেইন - কার্ল ফ্রেডরিক গাউসের জীবন বাঁচিয়েছিলেন যে নারী গণিতবিদ
- Get link
- Other Apps
Comments
Post a Comment