Skip to main content

Featured

সোফি জার্মে‌ইন - কার্ল ফ্রেডরিক গাউসের জীবন বাঁচিয়েছিলেন যে নারী গণিতবিদ

        গণিতশাস্ত্রের ইতিহাসের শুরুর দিকে পুরুষরা যতটা সমাদৃত, নারীরা তুলনামূলকভাবে ততটাই অবহেলিত। প্রাচীন মিশরের আলেকজ়ান্দ্রিয়ার হাইপেশিয়ার ( Hypatia , ৩৫০ - ৪১৫) করুণ পরিণতি থেকে শুরু করে এমিলি শাৎলে ( É milie du Ch â telet , ১৭.১২.১৭০৬ - ১০.০৯.১৭৪৯), ক্যারোলিন হার্শেলদের ( Caroline Lucretia Herschel , ১৬.০৩.১৭৫০ – ০৯.০১.১৮৪৮) লড়াই – সব মিলিয়ে গণিতকর্মে নারীদের অগ্রগতির পথ খুব একটা মসৃণ ছিলনা। তবে ব্যতিক্রমও ছিল। ইতালির এলেনা লুক্রেজিয়া কোর্নারো পিসকোপিয়া ( Elena Lucrezia Cornaro Piscopia , ০৫.০৬.১৬৪৬ – ২৬.০৭.১৬৮৪) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চার-চারটি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। তবে আজকের এই গল্প পিসকোপিয়াকে নিয়ে নয়, বরং এমন এক নারী গণিতবিদকে নিয়ে, যিনি গণিতের জন্য কেবল নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নয়, বরং তখনকার যুগের সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেন এবং “গণিত একটি গুরুমুখী বিদ্যা” – এই ধারণাকে আংশিক মিথ্যা প্রতিপন্ন করে একজন স্বশিক্ষিত গণিতবিদের মর্যাদা পান। শুধু তাই নয়, তিনি গণিতের রাজপুত্র নামে খ্যাত কার্ল ফ্রেডরিক গাউসের ( Johann Carl Friedrich Gauss , ৩০.০৪.১৭৭৭

কলকাতা এবং চার্লস ডিকেন্সের কান্না

    ভিক্টোরিয়ান যুগের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বললে অনেকেই নাম নেবেন চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০)। জনপ্রিয়তার নিরিখে তাঁর ধারেকাছে সেইসময় কেউ ছিলেন না। বিশ্ব সাহিত্যে তাঁর অবদান অগাধ। কিন্তু এই লেখক তাঁর বাহান্নতম জন্মদিনের দিন ভেঙে পড়েছিলেন এক হৃদয় বিদারক কান্নায়। সেই কান্নার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের কলকাতা।

    ওয়াল্টার স্যাভেজ ল্যান্ডার ডিকেন্স ছিলেন চার্লস ও ক্যাথেরিন ডিকেন্সের চতুর্থ সন্তান এবং দ্বিতীয় পুত্র। যেমন বাপ তেমন ছেলে — ছোটোবেলা থেকেই ওয়াল্টারের মধ্যে লেখক প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। স্কুলশিক্ষকদের কাছ থেকেও পুত্রের এই সম্ভাবনার খবর বাবার কানে পৌঁছায়। কিন্তু অত্যাশ্চর্য ব্যাপারটি হচ্ছে, এতো বড়ো বিশ্ববরেণ্য লেখক তাঁর নিজের ছেলের লেখক হয়ে ওঠার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। এর সঠিক কারণ কারোর জানা নেই। হয়তো তখন ইংল্যান্ডেও প্রতিষ্ঠিত লেখকদের সম্মান যত মিলত, দক্ষিণা তার থেকে অনেকটাই কম মিলত। নইলে বিশ্ববিখ্যাত লেখকের কেন মনে হবে, লেখক হওয়ার থেকে অনেক বেশি নিরাপদ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনার চাকরি?

    যাই হোক, যথেষ্ট তাড়াহুড়ো করে তিনি তাঁর কিশোর পুত্রকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে পাঠানোর জন্য মনস্থির করে ফেলেন। তাঁর ইচ্ছানুসারে এক ১৬ বছরের কিশোরকে রওনা হতে হল অজানা-অচেনা ভারতবর্ষের উদ্দেশ্যে। তখন ভারত বলতে বিদেশীদের কাছে এক অত্যন্ত দরিদ্র দেশ, হতমান জাতি, জাত-পাত ছোঁয়াছুঁয়ি নিয়ে ব্যস্ত, সাধু আর ফকিরদের দেশ, অসংখ্য বিষধর সাপ আর জংলী জানোয়ারে ভরা। চারিদিকে মশা-মাছি ভনভন করছে। যখন তখন ম্যালেরিয়া-কালাজ্বর-ওলাওঠায় গ্রামের পর গ্রাম সাবাড় হয়ে যাচ্ছে।

    সেই ভয়ঙ্কর সময়ে ১৬ বছরের এক একাকী বালক মা-বাবা ভাইবোনদের ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে লেখক হওয়ার স্বপ্ন মাতৃভূমিতে ফেলে রেখে কেন্ট ও ক্যামডেন থেকে চড়লেন ভারতবর্ষগামী জাহাজে। আর কি দুর্ভাগ্য তাঁর, এসেই তিনি পড়লেন রক্তক্ষয়ী মহাবিদ্রোহের কবলে। যে আঙুল স্বপ্ন দেখত সাহিত্যসৃষ্টির, অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেই আঙুল দিয়ে টানতে হল বন্দুকের ট্রিগার।

    কিশোর ডিকেন্সের লেখক হওয়ার স্বপ্নই যে শুধু ভেঙেছিল তা নয়, এদেশে এসে রক্তপাত ও হত্যালীলা দেখে তাঁর মন ও শরীরও একেবারে ভেঙে পড়েছিল। মহাবিদ্রোহ দমন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে ব্রিটিশ আর্মি সেনাবাহিনীর দায়িত্ব গ্রহণ করে। জুনিয়র ডিকেন্সের পদমর্যাদা হয় ব্ল্যাকওয়াচ রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট। হয়তো এই পদোন্নতিতে ইংল্যান্ডে তাঁর আত্মীয়স্বজনরা খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু সেনাবাহিনীর জীবন ওয়াল্টারের অসহ্য লাগছিল। সেই যুগের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে তাঁর শরীরেরও ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল।

    সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়। ভগ্ন স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে সেই অনুমতি পেতে লেগে গেল ছয় বছর! ধারদেনা করে ফেরার জাহাজের টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিধি বাম! এতোকিছু করেও তাঁর আর ফেরা হয়নি প্রিয় জন্মভূমিতে। ১৮৬৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মাত্র ২২ বছর বয়সে সেনাবাহিনীর হাসপাতালে নিভে যায় তাঁর জীবনদীপ। ওয়াল্টারের নশ্বর দেহ অতি সাদামাটাভাবে কবর দেওয়া হয় ভবানীপুরে ইংরেজ সৈনিকদের সেমেটারিতে।

    ট্র্যাজেডির এখানেই শেষ নয়। ওয়াল্টার মারা গেলেন ১৮৬৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর, কিন্তু সেই খবর তখনও ডিকেন্স দম্পতির কানে পৌঁছায়নি। ১৮৬৪ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে চার্লস ডিকেন্সের জন্মদিন। চাঁদের হাট বসেছে সেদিন। কিন্তু বজ্রপাতের মতো ওইদিনই তাঁদের কাছে এসে পৌঁছাল পুত্র ওয়াল্টারের মৃত্যুসংবাদ। জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত গণ্যমান্যরা দেখছেন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন ক্যাথেরিন, আর এক টুকরো কাগজ হাতে নিয়ে পাথর হয়ে বসে রয়েছেন লেখক চার্লস ডিকেন্স।

    ১৯৮৭ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনাকয়েক ছাত্রছাত্রী নিজস্ব উদ্যোগে ওয়াল্টার ডিকেন্সের টম্ব স্টোনটি পার্ক স্ট্রিট সেমেটারিতে অষ্টাদশ শতকের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমাধিক্ষেত্রে স্থানান্তরিত করেন। কিন্তু টম্ব স্টোনটির অবস্থা অতীব শোচনীয়। স্টোনের ওপরে নামটুকুও ঠিকভাবে পড়া যাচ্ছেনা। এমনকি কবরটি কোনো উঁচু বেদীর উপরেও নয়, রয়েছে মাটির সমতলে। ঘাসজমি এবং চলার পথের উপরে থাকায় লেখাগুলির ক্ষয় তরান্বিত হয়েছে।


♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️♦️

তথ্যঋণঃ কলিকাতা - সেকালের গল্প একালের শহর — ডঃ তিলক পুরকায়স্থ

Comments